............................................................................................................................................................................................... অবসাদ থেকে মুক্তির উপায়

অবসাদ থেকে মুক্তির উপায়



অবসাদ (Fatigue)

অবসাদ এবং কাজ একে অপরের সঙ্গে জড়িত। সুতরাং অবসাদ কি জানার আগে জানতে হবে কাজ কি? পদার্থ বিজ্ঞানের ভাষানুসারে কোন বস্তুর ওপর বলপ্রয়োগ করার পর যদি বস্তু স্থানচ্যুত হয় তাহলে বলপ্রয়োগ করাকে কাজ বলে। অর্থাৎ কোন একক পরিমান বস্তুকে একক পরিমান দূরত্বে স্থানচ্যুত করাকে কাজ বলে। অবসাদ হল এই কাজ করার ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া অর্থাৎ কাজ করার ক্ষমতা কমে যাওয়া।

কর্মক্ষমতা হ্রাস হওয়ার দুটি কারণ বর্তমান। একটি হল প্রেষণার অভাব এবং অন্যটি হল অবসাদ। অবসাদের সংজ্ঞা হিসাবে বলা যায় যে কাজ করার সময় বা কোন একটি কাজের পর কাজের গতি কমে যাওয়াকে অবসাদ বলে। স্যান্ডিফোর্ড এর মতে "কর্ম ক্ষমতার হ্রাসই হল অবসাদ। হার্ভে পিটারসন এর মতে "অতিরিক্ত কাজ করার জন্য কর্মক্ষমতার হ্রাসই হল অবসাদ।  

অবসাদের লক্ষণ:

কাজ করতে করতে যখন ক্লান্তি আসে তখন কতকগুলি লক্ষণ দেখা যায়। যাতে বোঝা যায় ব্যক্তিটি অবসাদে ভুগছেন, যেমন- কাজের গতি হ্রাস পায়, দেহ ক্লান্তি অনুভব করে এবং বিশ্রাম চায়, দক্ষতা কমে আসে, কাজে ভুল করতে থাকে, মনোযোগের অভাব দেখা যায়, মাথা ধরে, বমি হতে পারে, কাজের দিক ভিন্নমুখী হয়ে পড়ে।

অবসাদের প্রকারভেদ:

মনোবিদগণ অবসাদকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন। যেমন 

  • দৈহিক অবসাদ, 
  • মানসিক অবসাদ 
  • অবসাদের অভিনয় বা ভান।

দৈহিক অবসান

খুব বেশি সময় ধরে দৈহিক পরিশ্রাম করার ফলে পেশীঘটিত এবং ইন্দ্রিয় ঘটিত যে অবসাদ আসে তাহাকে দৈহিক অবসাদ বলে। প্রতিটি মানুষের দৈহিক পরিশ্রম করার একটি সীমা আছে। শ্রম যখন এই সীমা ছাড়িয়ে যায় তখন অবসাদ আসে। আবার অনভ্যাস জনিত কারনে সীমার মধ্যে থাকলেও দৈহিক অবসাদ আসতে পারে। দৈহিক অবসাদ আসবে তখনি, যখন দেহগত পরিশ্রম করা হয়। কর্ম অনুশীলন করা কিংবা কোন খেলা প্রথম দিন খেলার সময় কিছুক্ষণ পর ক্লান্তি গ্রাস করে,  এবং খেলার গতি কমে যায় যা  দৈহিক অবসাদ।

মানসিক অবসাদ

মানসিক কাজ অনেক্ষন ধরে করার ফলে মানসিক অবসাদ অসতে পাবে যেমন বিচার শক্তির প্রয়োগ চিন্তা ভাবনা বা কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত করার ফলে। মানসিক অবসাদ আসতে পারে। মনোবিদগণ দৈহিক অবসাদ ও মানসিক অবসাদ একক অর্থে দেখেছেন কারণ দেহ এবং মন একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। দৈহিক অবসাদ হওয়ার সাথে সাথে মানসিক অবসাদ ও চলে আসে। আবার অনেক সময় দেখা গেছে দৈহিক কাজকর্মের ফলে মানসিক অবসাদ চলে এসেছে পক্ষান্তরে, মানসিক কাজকর্মের ফলে দৈহিক অবসাদ ও আসতে পাবে। তাই অনেক মনোবিদ অবসাদকে আংশিক অবসাদ এবং সামগ্রিক অবসাদ এই দুই শ্রেণীতে ভাগ করেছেন। 

অবসাদের অভিনয় 

এটা প্রকৃত পক্ষে অবসাদ নয় কিন্তু অবসাদের অভিনয় করে এবং অক্ষমতা প্রকাশ করে। নিদিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কাজের প্রতি প্রক্ষমতা প্রকাশ এবং সঙ্গে সঙ্গে অন্য কাজে উৎসাহের সঙ্গে কাজ করতে পারে। প্রথম কাজের সময় কাজের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করাকে অবসাদের অভিনয় বলে। যেমন স্কুলে যাওয়ার কথা বলা হলে শিশুয়া, নানান অজুহাত প্রকাশ করে। মনোবিদরা পরীক্ষা করে দেখেছেন প্রায় আশি শতাংশের ক্ষেত্রে শরীর খারাপের কথা বলা হয়। পরক্ষণে দেখা যায় সেই ছেলেটি দাপিয়ে ফুটবল খেলে এল। এই প্রথমবার স্কুলে যাওয়ার ভীতিটা লে অবসাদের অভিনয়।

অবসাদের কারণ:

 অবসাদ মূলত শরীবের আসে তাই অবসাদের কারণ প্রধানত  শরীর । অবসাদ কেন আসে তথ্য নিম্নে আলোচনা করা হল-

১)শক্তি ক্ষয় 

কাজ করার জন্য যে স্নায়বিক শক্তির দরকার তাহা দেহের পেশী এবং কোষের  উপদান থেকে আসে। কাজ করার ফলে দেহের এই সব অংশের ক্ষয় হয় এবং অনেকক্ষণ ধরে কাজ করার ফলে এত বেশি ক্ষয় হয় সেই ক্ষয় পূরণ হয়ে দেহ স্বাভাবিক হতে পারে না অর্থাৎ শক্তি এবং শক্তির ক্ষয় পুরণের মধ্যে তারতম্য দেখা দেওয়ার দরুন স্বাভাবিক ভাবে অবসাদ দেখা যায়।

২) ল্যাকটিক অ্যাসিড-

পেশীর স্বাভাবিক ক্রিয়ার ফলে পেশীর মধ্যে ল্যাকটিক অ্যাসিড জমা হয়। বিভিন্ন আস্তর যন্ত্রীয় ক্রিয়ার ফলে এই ল্যাকটিক অ্যাসিডের অপসারণ ঘটে। কিন্তু অতিরিক্ত কাজ করার ফলে এত বেশি পরিমানে ল্যাকটিক অ্যাসিড জমা হয় যা অত তাড়াতাড়ি অপসারিত হতে পারে না। ফলে পেশী কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ইহা কম অনুশীলনের জন্য হয়।

৩) অক্সিজেনের অভাব-

দেহের যাবতীয় শক্তির উৎস কার্বহাইড্রেড জাতীয় খাদ্য। এই খাদ্যের বিশ্লেষণ ঘটে অক্সিজেন দ্বারা। সুতরাং অক্সিজেনের অভাব ঘটলে শর্করা বা কার্বহাইড্রেড জাতীয় খাদ্যের বিশ্লেষণ হবে না বা কম হবে ফলে অবসাদ চলে আসবে।

৪) ঘাম-

অত্যধিক পরিমানে কাজ করার ফলে দেহ থেকে প্রচুর পরিমানে ঘাম নির্গত হয়ে যায় এবং ঘামের সঙ্গে লবন ও বেরিয়ে যায় ফলে দেহে লবনের পরিমান হ্রাস পায়। এবং কর্মক্ষমতা কমে আসে।

৫) দৈহিক ত্রূটি

দেহগত কোন ত্রূটি থাকা অবস্থায় কাজ করতে থাকলে অতিরিক্ত শক্তি ক্ষয় হতে পারে কারণ একটি অংগের ত্রূটি মানেই কাজ করার জন্য অন্য ত্রূটি হীন অংগের উপর অধিক পরিমাণে চাপ পড়ে। ফলে সহজে অবসাদ চলে আসে।

৬) শারীরিক অসুস্থতা-

শরীর অসুস্থ থাকা অবস্থায় কাজ করলে অবসাদ আসতে পারে।

৭) কার্যক্রমের চাপ

যার ক্ষমতা যা তার থেকে বেশি ক্ষমতা লাগবে এরকম কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করলে অবসাদ আসতে পারে।

৮) পারিপার্শ্বিক অবস্থা-

পারিপার্শ্বিক অবস্থা কাজের অনুকূল না হলে। সেই কাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের অবসাদ আসতে পারে। পারিপার্শ্বিক অবস্থা বলতে বোঝায়- তাপ, বৃষ্টি, রৌদ্র, আর্দ্রতা, গন্ধ, ভয় দেখানো, অতিরিক্ত আওয়াজ এবং অতিরিক্ত আশা ইত্যাদি।

অবসাদ মুক্ত করার উপায়:



যে কারণ গুলির জন্য অবসাদ আসতে পারে সেগুলি থেকে দেহকে মুক্ত করলে অবসাদকে কাটিয়ে ওঠা যায়। অবসাদ কাটানো উপায়গুলি হল।

  • অনুশীলন- দক্ষ প্রশিক্ষকের নির্দেশমত অনুশীলন করতে হবে। অনুশীলনের চাপ ক্রমাগত বাড়াতে হবে।
  • পরিশ্রম - দেহকে সবসময় পরিশ্রমমূখী করে রাখতে হবে।

  • ঘাম- অতিরিক্ত ঘাম হলে বেশি করে লবনজল বা স্যালাইন জল খেতে হবে।

  • আনন্দমূলক খেলা-কোন একটি নির্দিষ্ট কার্যক্রমে যখন অবসাদ চলে আসে তখন সেই কার্যক্রম থেকে সাময়িক বিশ্রাম দিয়ে সেই কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন ধরনের আনন্দমূলক খেলা খেলানর মধ্যে দিয়ে অবসাদ দূর করা যায়।

  • বিশ্রাম- অবসাদ মুক্ত করার সবচেয়ে বড় উপায় হল বিশ্রাম। বিশ্রাম করার ফলে দেহ আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়।

  • ঘুম- ঘুমের মধ্যে দিয়ে অবসাদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

  • স্নান - অবসাদ আসার পর কার্যক্রম থেকে ফিরে এসে ভাল করে স্নান করলে অবসাদ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

  • পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ- পরিবেশগত বিভিন্ন জৈব ও অজৈব উপাদানের নিয়ন্ত্রণ ও উপাদানের বৈশিষ্ট্যর ওপর ভিত্তি করে কার্যক্রম দেওয়া হলে সহজে অবসাদ আসে না। চাহিদা - শিক্ষার্থীর চাহিদা অনুসারে কার্যক্রম দেওয়া হলে অবসাদ সহজে আসে না।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন
This Template Designed By e10Script